প্রচুর ভালোবাসা এক সময় প্রচুর ঘৃণাতে বদলে যেতে পারে। একটা মানুষ যাকে সব কিছুর থেকে বেশি ভালোবাসতো, এমনি এমনি সে কখনো তার ক্ষতি করতে পারে না। প্রচুর আবেগ প্রচুর ভালোবাসার সমাপ্তিটা মাঝে মাঝে খুব ভয়ানক হতে পারে। সবাই সব কিছু মেনে নিয়ে সব কিছু গ্রহণ করতে পারে না।
আমাদের জীবনের অনেক ব্যাপারগুলোই এমন হয় যে আমরা সবাই সব কিছু সহ্য করতে পারি না। যদি সহ্য করতে পারতাম! তাহলে, এতো মানুষ রোজ আত্মহত্যা করতো না, এত মানুষ প্রতিহিংসার স্বীকার হয়ে খুন হতো না।
প্রচণ্ড কষ্ট আমরা কেউ কেউ সহ্য করতে পারি, তবে অনেকেই পারি না। কারো কারো শারীরিক কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা বেশি থাকে। করো মানসিক কষ্ট সহ্যের ক্ষমতা বেশি থাকে। আবার এর উল্টোটাও হয়, কিছু মানুষ আছে সামন্য রক্ত দেখলে অজ্ঞান হয়ে যায়, কিছু মানষ দূর সম্পর্কের অনাত্মীয় কারো মৃত্যু সংবাদেও বুকে ব্যাথার ওষুধ খেতে হয়।
ভুল মানুষকে ভুল কষ্ট দেওয়াটা ঠিক না, কেননা একসময় সেটা নিজের জীবনে ফিরে আসতে পারে, আমাদের জীবনের এই সমস্যাগুলো যখন ফিরে আসে তখন শুধু আমাদের হয়ে ফিরে আসে না, আমাদের মা বাবা ভাই বোন পুরো পরিবারকে জড়িয়ে ফেলে।
আজকে যাকে ছেড়ে যাচ্ছেন তাকে এমনি এমনি ছেড়ে যাচ্ছেন না, তার অনেক দোষ থাকতে পারে, তবুও ছেড়ে যাওয়ার আগে একবার ভেবে দেখেন- আপনার চলে যাওয়াটা তাকে কতটা প্রভাবিত করবে? যাকে ছেড়ে যাচ্ছেন সে সেটা সহ্য করতে পারবে কি না? সহ্য করতে পারলে তাকে সহ্য করতে দেন, আর না পারলে সহ্য করতে বাধ্য কইরবেন না। আপনার চলে যাওয়া যে সহ্য করতে পারবে না তাকে সুযোগ দিন। আপনি তার থেকে কি আশা করেন সেটা তাকে বুঝান, আপনার স্বপ্নগুলো তাকে বুঝান, সে অবশ্যই আপনার স্বপ্ন চাহিদা পুরণ করতে সর্বচ্চ চেষ্টা করবে।
যাকে সারা জীবন পাশে থাকার পাশে রাখার স্বপ্ন দেখিয়েছেন, শুধুমাত্র নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য তাকে ছেড়ে যাওয়াটা তার জন্য যতটা কষ্টের আপনার জন্যও ঠিক ততটাই খারাপ। জীবনে ভুল ভ্রান্তি থাকবে, চাওয়া পাওয়ার ব্যবধান থাকবে, সময়েরটা সময়ে সমাধান করা উচিত, মনের ভিতরে সব জমা করে রেখে একদিন হঠাৎ সব সামনে নিয়ে এলে চিরচেনা মানুষটা খুব অচেনা হয়ে যায়। এত অল্প সময়ে বদলে যাওয়া চিরচেনা মানুষের এই অচেনা চেহারাটা ভালোবাসাটাকে পাল্টে দিয়ে ভিতরে এক ধরনের ক্ষোভ তৈরি করে। আর সেই ক্ষোভ থেকেই যত প্রতিশোধ প্রতিহিংসা আর আত্মহনন জন্ম নেয়। এই ক্ষোভ থেকে কেউ নিজে আত্মহত্যা করে, কেউ সেই মানুষটার মুখে এসিড মারে, কেউ দলবল নিয়ে সেই মানুষটাকে ধর্ষণ করে। কেউ নেটে ভিডিও আপলোড করে, কেউ সেই মানুষটাকেই খুন করে ফেলে।
এগুলোর যে কোনো একটা নিজের সাথে বা অন্যের সাথে যে করবে সে সমাজের চোখো আইনের চোখে অপরাধি। সমাজ তার অপরাধটা দেখবে, কিন্তু সেই অপরাধের পিছনে আপনারও যে ভূমিকা আছে সেটা দেখবে না। মানুষ দুদিন আহা উহু করবে, আপনার পরিবারকে সিমপেথি দেখাবে, তারপর আবার অন্য কেউ একইরকমভাবে আপনাকে ভুলে যাবে। ভুলতে পারবে না কেবল আপনার এবং তার পরিবার, শাস্তি ভোগ করবেন আপনি এবং তিনি। আজীবন ফল ভোগ করবে আপনাদের পরিবার।
এতোদিনের এতো আবেগ এতো মধুর ভালোবাসার কাঁথায় যখন আগুন লাগাচ্ছেন, আগুন ছড়িয়ে পরার আগে নিজের ইগো নিজের জিদ এগুলোকে একটু চাপা দিয়ে সুস্থির হয়ে একবার ভেবে দেখেন, যাকে ছেড়ে যেতে চাচ্ছেন তার জীবনের কতটা জুরে আপনি আছেন? আপনাকে কি সে বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন করে রেখেছে? যে কারণে ছেড়ে যাচ্ছেন সেটা কি দুজন মিলে সমাধান করা সম্ভব?
ভুল মানুষকে নিয়ে জীবন পার করা যায় না, কিন্তু কিছু ভুল মানুষকে নিজের মতো করে তৈরি করে নেওয়া যায়।
যখন মাইন্ড সেট করে ফেলবেন যে তার সঙ্গে আর থাকবেন না তখন তার খারাপ দিকগুলো আপনার সামনে ভাসতে থাকবে, ভালো কিছু তখন সামনে আসবে না। যার সঙ্গে জীবনের একটা দীর্ঘ সময় পার করেছেন তার সবই যে খারাপ সেটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ভালো অনেক দিক রয়েছে তার, জোর করে তার ভালো দিকগুলো মনে করার চেষ্টা করেন। দেখবেন একটা সময় এতো এতো ভালো দিক সামনে আসবে যে খারাপ দিকগুলো আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।
যেই মানুষটা আপনাকে না পেয়ে আতœহত্যা করতে চায় সে এখনো আপনাকে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসে, যেই মানুষটা আপনাকে না পেয়ে আপনাকেই খুন করতে চায় সে এখন আপনাকে ততটাই ঘৃণা করে যতটা সে আপনাকে এক সময় ভালোবাসতো।
কাউকে প্রচুর ভালোবাসতে শেখালে, প্রচুর স্বপ্ন দেখতে শেখালে, কারো কাছে নিজেকে তার জীবনের অবলম্বন বানালে, চেষ্টা করেন সারা জীবন এক সঙ্গে থাকার। প্রচুর ভালোবাসা থেকে যে প্রতিহিংসা প্রতিশোধ আর ঘৃণার জন্ম হয় তার পরিণাম হয় খুবই ভয়াবহ।
Comments
Post a Comment